জ্ঞাপন (COMMUNICATION)
---------------------------------------------------
INTRODUCTION বা ভূমিকা :
জ্ঞাপন বা COMMUNICATION শব্দটি গোটা বিশ্বে আজ গুরুত্বপূর্ণ অর্থবহন করে এগিয়ে চলেছে। সমকালীন বিশ্বে বহু চর্চিত বিষয় গুলোর মধ্যে জ্ঞাপন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেবল উন্নত দেশগুলোতেই নয়, তৃতীয় এবং উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশ গুলিতেও কমিউনিকেশন বা জ্ঞাপন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখেছে এবং শিখে চলেছে। সভ্যতার আদি পর্যায় থেকে সমাজ বিবর্তনের যাবতীয় তত্ত্ব এসে মিলিত হয়েছে জ্ঞাপনের দ্বারে , যেখানে সমাজতত্ত্ব আলোচনায় যাবতীয় সমস্যা গুলির সমাধান করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে জ্ঞাপন প্রক্রিয়াকে তত্ত্বব্যাখ্যার মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করার কাজটি শুরু করা হয়। ‘Communication’ বা ‘জ্ঞাপন’- এই ব্যবহারিক শব্দ গুলি কয়েকজন ইলেকট্রিক্যাল এনজিনিয়র ক্লদ শ্যানোন , ওয়ারেন উয়েভার প্রথম প্রয়োগ ঘটান তাদের আঙ্গিক তত্ত্বের প্রণয়নের মাধ্যমে। এছাড়াও নরবার্ট ওয়েইনার সাইবারনেটিকস্ তত্ত্বপর্যায়ে জ্ঞাপনের উল্লেখ করেন।
জ্ঞাপনের সংঙ্গা :
সংযোগ বলতে বোঝায় দুটি বিন্দুর যোগ সাধন। এবং যেকোনো প্রকার সংযোগ স্থাপনকেই বলা হয় জ্ঞাপন। সে অর্থে বলতে গেলে রাস্তা-ঘাট এক অন্য স্থানের কিংবা শহরের সাথে সংযুক্ত করা হলে, সেই সংযোগকেও বলা হয় কমিউনিকেশন। যখন কোনো স্থানে রাস্তা নির্মাণ করা হয় এবং সেই রাস্তা নির্মাণের সাথে সাথেই সেই স্থানটির সাথে শহরের কিংবা যেকোনো স্থানের মধ্যে সংযোগ স্থাপন হয় এবং এক্ষেত্রে শুরু হয়, ব্যবসায়ীক বার্তা আদানপ্রদান কিংবা সাংস্কৃতিক বার্তার আদানপ্রদান। তবে আমরা যে অর্থে এই কমিউনিকেশন শব্দটি ব্যবহার করে থাকি সেটা পথ-ঘাট বা রাস্তা নির্মাণের সাথে সংযুক্ত নয়, কারণ আসল কমিউনিকেশন তত্ত্ব তখনই প্রযোজ্য যখন সেটা একটা মানুষের সাথে আরেকটি মানুষ কিংবা একাধিক মানুষের মধ্যে কথোপকথন বা ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে এই জ্ঞাপন বা কমিউনিকেশন করা হয়ে থাকে, যেমন- শিক্ষা, তথ্যের আদানপ্রদান, বিনোদন, সামাজিকীকরণ, প্রণোদন, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও সুসংহতি।
যখন দুই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে কথোপকথন এর মাধ্যমে তথ্য, বার্তা, ধারণা, মতের প্রকাশ, আদর্শ ও মতাদর্শকে একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নেয় কিংবা ছড়িয়ে দেয় তাকে বলা হয় জ্ঞাপন। জ্ঞাপন হলো সংকেত সমূহের আদানপ্রদান । গোটা বিশ্বে যা আজ সমাজ পরিবর্তনের প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করে চলেছে।
আলাপ-আলোচনা, কথাবার্তার বিনিময়, ভাবের বিনিময় ইত্যাদির মাধ্যমেই সমস্ত প্রাণী পরস্পরের সঙ্গে কমিউনিকেশন করে এবং বার্তা আদানপ্রদান করে থাকেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে কমিউনিকেশন ? কিংবা জ্ঞাপন কিরে সম্ভব ?
সেক্ষেত্রে এর আলাদা তাৎপর্য বর্তমান, কারণ মানুষের এই ভাব বিনিময়ের এক আলাদা তাৎপর্য আছে। মানুষ কথা রাখতে পারে, তাছাড়াও মানুষ ইসারা-ইঙ্গিতে, মুখের হাব-ভাব ও নানাবিধ ভঙ্গিতে, মুখের অভিনব অভিব্যক্তিতেও জ্ঞাপন করে থাকেন। মাথা কোন দিকে নড়ছে তা দেখেও খুব সহজেই হ্যাঁ কি না এর উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়। মুখের হাবভাব দেহের ও মনের অবস্থা বোঝাতে সক্ষম এবং দেহের অঙ্গভঙ্গি বার্তার কাজ করে থাকে।
কমিউনিকেশন এর প্রকারভেদ :
(TYPES OF COMMUNICATION)
কমিউনিকেশন এর ক্ষেত্রে মূলত তিন প্রকার রূপে এটি বিরাজমান। প্রতিটা ক্ষেত্রেই জ্ঞাপন কি করে নিজের কাজ করে চলেছে সে বিষয়ে আলোচনা করা হল ,
কথিত জ্ঞাপন (verbal communication)
মানুষের সাথে মানুষের কথা-বার্তা অথবা তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে কমিউনিকেশন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সেটা এক ব্যাক্তি ও ওপর কোনো ব্যক্তির সাথে হতে পারে , কিংবা দলগত ভাবেও হতে পারে। টেলিফোনের মাধ্যমে এই কমিউনিকেশন হয়ে ওঠে, এক ব্যক্তি যখন ওপর কোনো ব্যক্তির সাথে কথা বলছেন কিংবা এক ব্যক্তি যখন ওপর কোনো ব্যক্তির সম্মুখে কথা বলছেন। অর্থাৎ এক ব্যক্তি যখন ওপর কোনো ব্যক্তির সাথে সরাসরি যোগাযোগ করছেন এবং তথ্য আদানপ্রদান করছেন এক্ষেত্রে জ্ঞাপন সম্পন্ন হচ্ছে। এটি দলগত ভাবেও হতে পারে, এক্ষেত্রে দেখা যায় দুটি ক্রিয়ার মাধ্যমেই জ্ঞাপন বা কমিউনিকেশন সম্পন্ন হচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এই জ্ঞাপনের মাঝে বিঘ্ন ঘটায় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
এই মাধ্যমে মানুষের মধ্যে কথোপকথন এর সময় লক্ষ্য করা যায় যখন দুইজন একে অপরের সঙ্গে কথা বলছেন কিংবা কোনো সভা বা দলের মধ্যে কথোপকথন হচ্ছে, এক্ষেত্রে কিন্ত একজনই কথা বলেন এবং অপরপক্ষ শোনেন। এবং তার বলা শেষ হলে অপরপক্ষ বুঝতে পারলে কথার মাধ্যমে কিংবা ভাবের প্রকাশ করে জানান দেয় তিনি বুঝতে পেরেছেন। কোনো মিটিংয়ে নেতা বক্তব্য দেওয়ার পর শ্রোতাদের করতালির দ্বারা তারা জানান দেন যে তারা বুঝতে পেরেছেন। এটির মাঝে যদি কিছু বিঘ্ন(noise) প্রবেশ করে সেক্ষেত্রে শ্রোতাদের কাছে তা অস্পষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে জ্ঞাপন সম্পন্ন হয় না। এরকমই দুই জন ব্যক্তি বিশেষ নিজের কথা বললে এক পক্ষ শোনেন এবং ওপর পক্ষ বলেন। দুজনের একত্রে কথা বলা শুরু করলে সেক্ষেত্রে বিঘ্ন(noise) এর উদ্ভব হয় এবং জ্ঞাপন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
অ-কথিত জ্ঞাপন (Non-verbal communication)
মানুষ মানুষের সাথে তথ্য আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র কথা, ভাষা কিংবা শব্দই যে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে তা নয়। বিভিন্ন দেশ, জাতি , ধর্ম ইত্যাদি ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন এ কথ্য মাধ্যম সফলভাবে সম্পন্ন হয় না। অনেকে একে ওপরের কথা নাই বুঝতে পারেন। কারণ বেশির ভাগ মানুষ নিজের ভাষা ছাড়া অন্য ভাষা বুঝতে সক্ষম নন। অথচ জ্ঞাপন একান্ত প্রয়োজনীয় । সেক্ষেত্রে ভঙ্গিমা, হাবভাব, স্পর্শ, দৃষ্টি,
ইসারা মানুষের না-বল কথাকে বুঝতে সাহায্য করে। এবং সেগুলো থেকেও কমিউনিকেশন সম্পূর্ণ হয়ে থাকে।
দেহের ভঙ্গিমা (body language), মুখের হাবভাব(facial expressions), চোখের অবস্থান (eye contact), শারীরিক পরিবর্তন(appearance), দেহের অবস্থান ও ব্যবহার (position and behaviour), গলার স্বরের তীক্ষ্মতা ও মাত্রা(voice tone and speech)
ইত্যাদি দ্বারাও কমিউনিকেশন করা হয়ে থাকে। তাছাড়াও মৌনতা, অট্টহাসি, অশ্রু, স্পর্শ অ-কথিত জ্ঞাপনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করে ।
তবে প্রশ্ন উঠছে স্পর্শ কি করে জ্ঞাপন ক্রিয়া করছে ?
কেউ কারোর সাথে হাতমেলালে বা সস্নেহে স্পর্শ করলে সুন্দর ভাবে বার্তা আদানপ্রদানের মাধ্যমে কমিউনিকেশন সফল হয়ে থাকে। এবং স্পর্শই বুঝিয়ে দেয় অবস্থার প্রতিকূল।
লিখিত জ্ঞাপন (Written Communication):
যেকোনো প্রক্রিয়ায় লিখিত মাধ্যমে মানুষ বার্তা আদানপ্রদান কিংবা তথ্য আদানপ্রদান করতে পারেন তাকে বলে লিখিত জ্ঞাপন। কেবল বার্তা হিসেবে লেখা ছাড়াও সিম্বল বা ইমোটিকন ও ব্যবহার করা যেতেই পারে। ই-মেইল, ফেসবুক, টুইটারে করা কোনো বার্তা আদানপ্রদান অথবা কোনো কনট্রাক্ট পেপারে লেখা কোনো এগ্রিমেন্টে নিজের লিখিত স্বাক্ষরের মাধ্যমেও এটি সম্পন্ন করা হয়। এই বিষয়ের মূল অন্তর্গত বিষয় হলো, লিখিত একটি বার্তার মাধ্যমে যখন দুই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে কমিউনিকেশন সম্পূর্ণ হয়ে ওঠে এবং বিশেষত সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য কমিউনিকেশন এর মাধ্যমেই হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন এ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় এই লিখিত জ্ঞাপন। লিখিত হওয়ায় প্রমাণ হিসেবে এটা ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে পরবর্তী কালে অপরপক্ষের ভুল বলার অপেক্ষা না রাখে।
- Sanny Bag
খুব সুন্দর
ReplyDeleteThanks
DeleteThanku.
Delete