ক্রস মিডিয়া মালিকানা
মিডিয়া ক্রস-মালিকানা হ’ল একক ব্যক্তি বা কর্পোরেট সত্তার একাধিক মিডিয়া উত্সগুলির সাধারণ মালিকানা। মিডিয়া সূত্রগুলির মধ্যে রয়েছে রেডিও, সম্প্রচারিত টেলিভিশন, বিশিষ্টতা এবং বেতন টেলিভিশন, কেবল, উপগ্রহ, ইন্টারনেট প্রোটোকল টেলিভিশন (আইপিটিভি), সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন এবং সাময়িকী, সংগীত, চলচ্চিত্র, বই প্রকাশনা, ভিডিও গেমস, অনুসন্ধান ইঞ্জিনগুলি, সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহকারী, এবং তারযুক্ত এবং ওয়্যারলেস টেলিযোগাযোগ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মিডিয়া সংহতকরণ এবং মালিকানার ঘনত্বের সাম্প্রতিক বৃদ্ধি গণমাধ্যমের উপর আস্থা হ্রাসের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মিডিয়া মালিকানার ঘনত্ব নিয়ে বেশিরভাগ বিতর্ক বেশ কয়েক বছর ধরে সম্প্রচারিত স্টেশন, কেবল স্টেশন, সংবাদপত্র এবং ওয়েবসাইটগুলির মালিকানাতে বিশেষভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
মিডিয়া মালিকানা সম্পর্কে দ্বিতীয় প্রেস কমিশন সতর্ক করে দিয়েছিলো এই বলে যে অন্য শিল্প এবং ব্যবসার মালিকরা যাতে মিডিয়া ব্যবসার থেকে দূরে থাকে তা নিশ্চিত করা দরকার। বাস্তবে তা করা যায়নি। সারা বিশ্বজুড়েই ক্রস মিডিয়া ওনারশিপ বা মালিকানা বাড়ছে। বিষয়টা ঠিক কী? মিডিয়া নানারকমের আছে, সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল, রেডিও। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইন্টারনেট মিডিয়া। আগে কোনো একটি মিডিয়া মালিক একটা মিডিয়াই পরিচালনা করতেন, সেটা সংবাদপত্র হতে পারে অথবা কোনো টিভি চ্যানেলে। কিন্তু গত কয়েক দশকে দেখা গেছে বৃহৎ মিডিয়া মালিকরা একাই সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল, ইন্টারনেট চ্যানেল সবকিছু চালাচ্ছে। অর্থাৎ একজন মিডিয়া মালিকের হাতে অনেকগুলি মিডিয়ার মালিকানা। যেমন ভারতে রিলায়েন্সের হাতে রয়েছে ১১টি ভাষায় ১৩টি টিভি নিউজ চ্যানেল এবং ২২টি টিভি বিনোদন চ্যানেল। বৃহৎ মালিকের হাতে সংবাদমাধ্যম এভাবে ক্রমশ কুক্ষিগত হয়ে যাচ্ছে। টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ট্রাই) সহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ এই ব্যপারে সতর্ক করেছে।
বৃহৎ মিডিয়া মালিকরা কেন এটা করে? ক্রস মিডিয়া মালিকানা হাতে থাকলে তাঁদের মুনাফা বাড়ে। একই সঙ্গে একাধিক মিডিয়ার মাধ্যমে বাজারে বেশি প্রভাব ফেলা যায়, যা প্রচার করা হবে তাই সত্য বলে প্রচারিত হয়। এতে একটি মিডিয়াগোষ্ঠী বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বাজারকে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সমস্যা কোথায়? সমস্যা হলো, বাজারে মিডিয়া একটি মালিকানার হাতে কুক্ষিগত হয়ে গেলে বহুত্ববাদ ধংস হয়ে যায়। অর্থাৎ একটি ঘটনাকে একজন মালিকের হাতে থাকা অনেকগুলি মিডিয়া যদি একইভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরে তাহলে তারা যা বলবে তাই জনগণ সত্যি বলে বিশ্বাস করবে। অন্য ভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার বা তুলে ধরার জন্য অন্য কোনো মিডিয়াই বাজারে উপস্থিত থাকে না। সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না। রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক স্বার্থে ঐ মিডিয়াগোষ্ঠী যা বলবে তাই প্রচারিত হয়ে যাবে একতরফা। এতে সমাজের নানা ধরনের কন্ঠস্বর উঠে আসে না। যেমন ধরো, সরকারের একটা নীতি জনগণের ভালো ঘটাবে নাকি মন্দ ঘটাবে তা নিয়ে সমাজে বিতর্ক প্রয়োজন। কিন্তু একটি মিডিয়া গোষ্ঠীর সব মিডিয়া মিলিতভাবে যদি একটাই মতামত দেয় তাহলে অন্য মতামতটা প্রচারিত হবে কী করে? তাই এটা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।
- শান্তনু দত্ত
Comments
Post a Comment