Skip to main content

Satyajit Ray and his Films in bengali - সত্যজিৎ রায় ও তার সিনেমা

 সত্যজিৎ রায় ও তার সিনেমা :







১. ভূমিকা__ বাংলার চলচ্চিত্রের আকাশে যে উজ্জ্বল চিত্রনির্মাতা ছিলেন তিনি হলেন সবার পরিচিত সত্যজিৎ রায়। তিনি বাংলা সিনেমা জগতের এক অনন্য সৃষ্টি। তিনি বিখ্যাত রায় পরিবারের একমাত্র সন্তান ছিলেন। তার বাবা সুকুমার রায় ও ঠাকুরদা বাংলার বিখ্যাত সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। তার জন্ম হয় কলকাতায় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে। 



২. জীবন কাহিনী__ সত্যজিৎ রায় ছেলেবেলা কেটেছে কলকাতায় এবং তিনি বিভিন্ন জায়গায় পাঠ্যবিষয় জ্ঞান লাভ করেন। প্রথমে বাংলার সরকারি স্কুলে ভর্তি হন। তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং ইংরেজিতে দক্ষ হওয়ার জন্য ক্যালকাটা লিডিং কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিএ পাস করেন ও বাংলা ইংরেজি দুই ভাষাতেই দক্ষতা লাভ করেন। এছাড়া ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে মায়ের তাগিদে শান্তিনিকেতনে আর্ট স্কুলে ভর্তি হন বিশেষভাবে প্রাচী ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী হয়ে। ভারত এবং অন্যান্য পূর্ব সংস্কৃতি চিত্র শিল্প গভীরভাবে প্রবেশ করেছিল তার জীবনে যার প্রভাব তার ছবিতে পরে। 



৩. কর্মজীবন এবং প্রথম পরিচালনা__ ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে সত্যজিৎ রায় কলকাতার ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থায় চাকরী করেন। তার কিছু বছর পর কলকাতার ছাপাখানায় কাজ করেন। তিনি প্রথম ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার চলচ্চিত্র জগতে স্ক্রিন প্লে করেন। তারপর ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রেঞ্চ ডিরেক্টরের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাংলায় 'The River' করেন। এরপর Vittorio Desica দিরেক্টর দ্বারা পরিচালিত 'The Bicycle Thief' ১৯৪৮ তিনি পরিচালনা করেন। এরপর ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় ছবি 'পথের পাঁচালী' পরিচালনা করেন যা লেখক দিরেক্টর তিনি নিজেই। এই ছবিটির গল্প কিছু লোকেশন ও অপুর চরিত্র অসামান্য হওয়ায় ছবিটি দারুণ সাড়া পায়। অপু ও দুর্গা দুজনেই ছিলেন non-professional তারকা। 



৪. সরকারি অনুমতি ও মনোনয়ন__ সত্যজিৎ রায়ের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ না থাকার দরুন 'পথের পাঁচালী' ছবিটি ১৯৫২ সালে মুক্তি পাবার বদলে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে ১৯৫৫ সালে মুক্তি পায়। এরপর ১৯৫৫ সালে 'পথের পাঁচালী' ছবির জন্য সত্যজিৎ রায় কে Cannes International Film Festival এ পুরস্কার পায়। এছাড়া তার সমান দুই দক্ষ ছবি যথা 'অপরাজিত'(১৯৫৬) 'অপুর সংসার'(১৯৫৯) সমানভাবে পুরস্কৃত হয়। 'পথের পাঁচালী' এর অপু একটি গরিব ব্রাহ্মণের ছেলে। তার ছেলেবেলা কেটেছিল কলকাতা শহরের অন্তর্গত এক ছোট্ট গ্রামে। তার মধ্যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি তাকে অধিক প্রভাবিত করেছিল।



৫. ছবির গুণাবলী__ সত্যজিৎ রায় ছবির মধ্যে আমরা নানা দিক খুঁজে পায় তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল- tradition, romanticism, সঙ্গীত ধর্মী, রহস্যময়, তথ্যচিত্র, কুসংস্কার, মধ্যবিত্ত সমাজ এইসব বিভিন্ন বিষয় আভাসও প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে তার ছবিতে। 


৬. সত্যজিৎ রায় বিভিন্ন বিষয়ে ছবি সম্পর্কে আলোচনা__ সত্যজিৎ রায় ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে বাংলার চলচ্চিত্র জগতে বিশেষ দক্ষ এক তারা ছিলেন। তিনি একাধারে সঙ্গীতধর্মী, রহস্যময়, tradition, romanticism এইসবের দিক থেকে সমান দক্ষ ছিলেন। 


সত্যজিৎ রায় 'The Inner Eye'(১৯৭২) কুসংস্কার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে গভীর অনুভূতি সম্পন্ন জনপ্রিয় তথ্যচিত্র করেন। যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর পরিচালনায় খুব প্রভাবিত ছিল। এরপর একে একে 'চারুলতা' (১৯৬৪) এক অসহায় মহিলার গল্প যা ট্রাজেডি ও ত্রিকোণ সম্পর্কে ভরা। এটি পাশ্চাত্য সংস্কৃতি সম্পন্ন একটি বাঙালি পরিবারকে তুলে ধরে। 'ঘরে বাইরে'(১৯৮৪) ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম বাংলার পরিবর্তনের ডাক উঠে আসে এই ছবিতে। 'জলসাঘর'(১৯৫৮) সঙ্গীত ধর্মী ছবি। 

এছাড়া 'সদ্গতি', 'দেবী',  'কাঞ্চনজঙ্ঘা' হিন্দিতে 'সাত রেঞ্চ কি খিলাড়ি'। তার একটি বৃহৎ বাজেটের ছবি হল 'লখনৌ'(১৯৫৬)।

এরপর একে একে কমেডি ছবি সঙ্গীতধর্মী ছবি ঠাকুরদার গল্প এছাড়াও কলকাতা নিয়েও তিনি ছবি করেন। ছাড়া মধ্যবিত্ত সমাজ কে নিয়ে ছবি তৈরি করেন। 'পরশপাথর', 'গুপিগাইন বাঘাবাইন', 'অশনি সংকেত' ইত্যাদি। এছাড়া তিনি তার ঠাকুরদার প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'সন্দেশ' নতুনভাবে প্রকাশ করেন। 


৭. উপসংহার__সত্যজিৎ রায় ১৯৯২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। সত্যজিৎ রায় প্রসঙ্গে যতটা বলা যায় ততটা প্রকাশ করা যায় না কারণ তিনি বিভিন্ন দিকে গল্প সাহিত্য ছোটগল্প সবদিকেই সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রজগতের সমান ভাবে পরিচালনাও করেন তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র কে বিশ্বের কাছে উপস্থিত করেছিলেন তাঁর এই অসাম্য দক্ষতার নিদর্শন 'Our Film Their Flim'(১৯৭৬) এর মাধ্যমে প্রকাশ ঘটে। সুতরাং বলা যায় চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অবদান সত্যিই অভাবনীয়।

        

                      -  TANUSHREE DUTTA

Comments

Popular posts from this blog

Film production steps in bengali চলচ্চিত্র নির্মাণ কৌশলের ধাপ

 চলচ্চিত্র নির্মাণ কৌশলের ধাপ চলমান চিত্রই হলো চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের প্রভাব এবং প্রচার আধুনিক সমাজে যে কতটা তা না বললেও চলে। চলচ্চিত্র একপ্রকারের দৃশ্যমান বিনোদন মাধ্যম। যেখানে একসঙ্গে দৃশ্য ও শ্রাব্য দুটিই উপভোগ করা যায়। বিনোদন দুনিয়ায় সবচেয়ে দৃঢ় এবং বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যমের মধ্যে চলচ্চিত্রের স্থান শীর্ষে। এই চলচ্চিত্র শব্দটি এসেছে  চলমান চিত্র তথা 'মোশন পিকচার' থেকে। সাধারণত চলচ্চিত্রের ধারণা শুরু হয় ঊনবিংশ শতকের শেষ দিক থেকে। বাংলায় চলচ্চিত্রের প্রতিশব্দ হিসেবে ছায়াছবি, সিনেমা, মুভি বা ফিল্ম শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়।                   একটি চলচ্চিত্রের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায় হলো চলচ্চিত্র নির্মাণ কৌশল। চলচ্চিত্র নির্মাণ হলো একটি প্রারম্ভিক পর্যায়। কারণ এই নির্মাণ কৌশলের ওপর ভিত্তি করেই একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র তৈরি হয়। চলচ্চিত্র নির্মাণ হলো প্রচুর সময়, ধৈর্য আর অমায়িক পরিশ্রমের একটি পরিনতিমাত্র। একটি চলচ্চিত্র নির্মাণকে তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়– ১) প্রি-প্রোডাকশন            ২) প্রো-প্রোডাকশন  ...

Dominant Paradigm in bengali - উন্নয়নের প্রভাবশালী দৃষ্টান্ত

 উন্নয়নের প্রভাবশালী দৃষ্টান্ত উন্নয়নের পশ্চিমা মডেল  ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে প্রাধান্য পেয়েছিল।  আধুনিকীকরণের দৃষ্টান্ত ১৯৪৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খুব শীঘ্রই উত্থিত হয়েছিল। "অনুন্নত দেশগুলিকে" তাদের আধুনিকায়নের মাধ্যমে এবং মুক্ত-বাজারের পদ্ধতির মাধ্যমে দারিদ্র্যের পরিস্থিতি থেকে বের করে আনা একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে উন্নয়নের কল্পনা করেছিল।  এই দৃষ্টান্তের উৎস , নীতি এবং প্রয়োগগুলি উত্তরোত্তর বছরগুলির ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করা উচিত, এটি শীত যুদ্ধের সময় হিসাবেও পরিচিত।  সেই ধারাটিতে যখন বিশ্ব প্রভাব দুটি পরাশক্তি দ্বারা পোলারাইজ করা হয়েছিল: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন।  তাদের প্রভাব উন্নয়ন সহ আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে প্রতিটি ক্ষেত্রে পৌঁছেছে।  এই প্রসঙ্গে, পশ্চিমা দেশগুলির রাজনৈতিক বিজ্ঞানী এবং পণ্ডিতদের দ্বারা প্রচারিত আধুনিকীকরণের দৃষ্টান্ত সামাজিক জীবনের প্রতিটি মাত্রায় এতটাই শক্তিশালী এবং এতটাই বিস্তৃত হয়ে উঠল যে এটি "প্রভাবশালী দৃষ্টান্ত" হিসাবেও পরিচিতি লাভ করে।  রজার্স (১৯৬০) এটিকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে "প...

French New Wave in Bengali - ফরাসী নবতরঙ্গ

 ফরাসী নবতরঙ্গ :       ফরাসী নিউ ওয়েভ চলচ্চিত্রগুলি চিরকালের জন্য তৈরি করার পদ্ধতিগুলি পরিবর্তন করেছিল এবং আমাদের  সময়ের সেরা কিছু পরিচালককে প্রভাবিত করেছিল। নিউ ওয়েভ একটি ফরাসি আর্ট ফিল্ম আন্দোলন যা ১৯৫০ এর দশকের শেষদিকে উত্থিত হয়েছিল। এৈতিহ্যবাহী চলচ্চিত্র নির্মাণের সম্মেলনগুলি প্রত্যাখ্যান করাই এই আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য ছিল।  নিউ ওয়েভ চলচ্চিত্র নির্মাতারা সম্পাদনা, চাক্ষুষ শৈলী এবং আখ্যান সম্পর্কিত নতুন পদ্ধতির অন্বেষণ করেছিলেন, পাশাপাশি যুগের সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্থাপনের সাথে জড়িত হয়ে প্রায়শই বিড়ম্বনা বা অস্তিত্ববাদী বিষয়গুলির অন্বেষণ করে।  নিউ ওয়েভ প্রায়শই চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী আন্দোলন হিসাবে বিবেচিত হয়। ফরাসী নবতরঙ্গের উৎপত্তি ১৯৪৮ সালের ৩০ শে মার্চ লাক্রানে প্রকাশিত আলেকজান্ড্রে অ্যাস্ট্রিকের ম্যানিফেস্টো "দ্য বার্থ অফ দ্য নিউ  অ্যাভান্ট-গার্ডে: দ্যা ক্যামেরা-স্টাইলো", কিছু ধারণার রূপরেখা প্রকাশ করেছিল যা পরবর্তীতে ফ্রান্সোইস ট্রাফুট  এবং কাহিয়ার্স ডু সিনেমার দ্বারা সম্প্রসারিত হয়েছিল। এটি যুক্তি দেয় যে "চ...